৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ৮:৪৬

সময় খরচ বাড়লেও শেষ হচ্ছে না জিমখানা লেকের কাজ

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ২০ কোটি টাকার জিমখানা লেকের প্রকল্প নিয়ে অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর। ইতোমধ্যে বেড়েছে প্রকল্পের পরিধি, ব্যয় ও সময়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের অগ্রগতির কথা জানানো হলেও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে ও নাসিকের তদারকির অভাবে তা নির্ধারিত সময়ে উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারী উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র আইভী। কিন্তু অদৃশ্য শক্তি দ্বারা বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এবং প্রকল্পের পরিধি বৃদ্ধির কারণে যথাসময় উদ্বোধন করতে পারেন নি মেয়র আইভী।

স্থানীয়রা বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই বিলম্ব করা হচ্ছে জিমখানা লেকের নির্মাণ কাজে। তাদের অভিমত, আইভীর দ্বিতীয় মেয়াদে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার তিন বছর সাত মাস পার হয়ে গেছে, আগামী নির্বাচনের বাকী আর মাত্র ১ বছর তিন মাস। তাই নির্মাণ কাজ বিলম্বিত করে আগামী সিটি নির্বাচনে এসব উন্নয়নমূলক কাজকে ব্যবহার করতে পারেন সিটি মেয়র আইভী। শুধু তাই নয়, আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগারটির কাজও অনেক বিলম্বে শেষ করা হয়েছিলো। বারবার নকশা ও ডিজাইনে ভুলের কথা বলা এ বিলম্ব করা হয়েছিল বলে জানা যায়। যদিও নগরবাসী বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবী, এ পাঠাগার ও মিলনায়তনের কথা বলে মেয়র ভোট চেয়েছিলেন গত নির্বাচনে।

একইসাথে তারা বলেন, জিমখানা লেকের প্রকল্পটি ২০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট। প্রায় চার বছর আগে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও এতোদিন সময় লাগার কথা না। সিটি কর্পোরেশনের এতো দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকতে কেন এতো সময় লাগছে, তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।

এদিকে নগরবাসী বলছে, গাফিলতির ফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা কাটছে না। এসব প্রকল্পে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের পাশাপাশি জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। মহাজোট সরকার অপচয়, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে সোচ্চার হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে যেন এসবের বাইরে। নাসিকের বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, তার জবাব জানা নেই কারও।

নারায়ণগঞ্জ শহরে এতটুকুও বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায় না সাধারণ মানুষ। তাই একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে কিংবা প্রিয়জনদেরকে নিয়ে পছন্দের কোনো স্থানে ঘুরতে চাইলে যেতে হয় নারায়ণগঞ্জের বাইরে। যেমন ঢাকার হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা, শাহবাগের জাতীয় শিশুপার্ক কিংবা শ্যামলীর শিশুমেলা। জনগনকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে লেকটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। লেকটির সংস্কারকাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সময় ছিল। যার প্রেক্ষিতে, ঐ বছরের অক্টোবরে লেকের কাজ পরিদর্শনে এসে সিটি মেয়র আইভী ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারী সাধারণ জনগণের জন্য লেকটি উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ঘোষণার পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি জিমখানা লেকের। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিনোদন প্রেমীদের এই লেকের পাশে আড্ডায় গল্পে সময় অতিবাহিত করতে দেখা গেলেও ধীরগতিতে লেকের নির্মান কাজ চলতে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, এ সকল প্রকল্প নিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টা থেকে দুরে থেকে অতি শীঘ্রই লেকের কাজ সম্পন্ন করে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। তারা চলতি বছরের মধ্যেই জিমখানা লেকটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে মেয়র আইভীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিলম্বের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ফোন সিভি করেন নি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা আবুল আমিন ।

নাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আজগর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আসলে এখন শুধু বাকী আছে মাঠের কাজ, মহিলা জিমনেশিয়াম, বোর্টিং ক্লাব। এখন বর্ষা চলে আসছে বর্ষার জন্য দেরী হচ্ছে, এছাড়া কোভিড এর জন্যও বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিলো। এ কাজগুলো শেষ করতে মাস ছয়েক এর মতো সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

শেখ রাসেল পার্কের নির্মাণ কাজপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রত্মা এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার জাকির হোসেন জানান, আসলে ধাপে ধাপে কাজের পরিধি বাড়ছে, দরপত্র আহবান হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শেষ হচ্ছে। আগে দুই ধাপে যথাক্রমে ৮ কোটি ও ১১ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। এবার তৃতীয় ধাপে ১৬ কোটি টাকার দরপত্রের কাজ চলমান। তাছাড়া মাঝে করোনা ভাইরাস এবং প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়। যদি নতুন করে কাজের পরিধি না বাড়ে বা নতুন কোনো দরপত্র আহবান করা না হয় তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার দরপত্রের কাজ শেষ হবে।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.